Abu Hurairah (RA): The Struggling Life Story of a Muslim Scholar
আবু হুরাইরা (রাঃ) কষ্টকর জীবনকথা:
ধাপ – ১: জন্ম, ইসলাম গ্রহণ ও প্রাথমিক জীবন
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর প্রকৃত নাম ছিল আবদুর রহমান ইবনে সাখর দাওসি। তিনি ইয়েমেনের দাওস গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের আলো তখন ধীরে ধীরে আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ছে। শৈশবে তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছিলেন। তার পরিবার খুব ধনী ছিল না, এজন্যই অল্প বয়সেই জীবিকার তাগিদে ছাগল পালতে শুরু করেন। তিনি ছাগল পালন করতে ভালোবাসতেন এবং একটি ছোট বিড়ালছানা (আরবি: হুরাইরাহ) তার সঙ্গে থাকত। সেই কারণে তার ডাকনাম হয়েছিল আবু হুরাইরা—অর্থাৎ বিড়ালছানার জনক।
ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর আগে তিনি মূর্তিপূজার সমাজে বসবাস করছিলেন। তবে তার হৃদয় ছিল পবিত্র ও অনুসন্ধানী। যখন ইয়েমেনের দাওস গোত্রে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে, তখন বিখ্যাত সাহাবী তুফাইল ইবনে আমর দাওসি (রাঃ) তাকে সত্যের দিকে আহ্বান জানান। তুফাইল রাঃ-র প্রচেষ্টায় আবু হুরাইরা ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি নবী করীম (সা.)-এর সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য উত্সুক হয়ে ওঠেন।
খন্দকের যুদ্ধের কিছুদিন পর আবু হুরাইরা (রাঃ) ইয়েমেন থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তার বয়স তখন প্রায় ৩০ বছর। তিনি যখন নবীজির (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখনই নবীজি তাকে ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে আবদুর রহমান রাখেন। তবে ডাকনাম আবু হুরাইরা আজীবন বহাল থাকে। এই ধাপ তার জীবনের এক মোড় ঘুরিয়ে দেয়, কারণ এখান থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন ইসলামের ইতিহাসে অমর এক নাম।
ধাপ – ২: নবীজির (সা.) সান্নিধ্যে জীবন
মদিনায় এসে আবু হুরাইরা (রাঃ) পুরোপুরি নবীজির (সা.) সঙ্গ ত্যাগ করেননি। তিনি আহলুস সুফফাহ নামক দরিদ্র সাহাবীদের দলের অন্তর্ভুক্ত হন, যারা মসজিদে নববীতে অবস্থান করতেন এবং ইসলামের জ্ঞানার্জনে নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন। তাদের জীবিকা ছিল অল্প, কিন্তু তারা ছিলেন ঈমান ও ইলমে সমৃদ্ধ।
আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর বিশেষত্ব ছিল তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। তিনি প্রতিটি কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং মনে রাখতেন। নবী করীম (সা.)-এর কাছ থেকে সরাসরি হাদীস শুনে তা সংরক্ষণ করা তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। একবার তিনি নবীজির কাছে দোয়া চাইলেন যাতে তিনি শোনা বিষয় ভুলে না যান। নবীজি (সা.) আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করলেন। এর পর থেকে তিনি যেসব কথা শুনতেন তা আর ভুলে যেতেন না।
মাত্র চার বছর নবীজির (সা.) সান্নিধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তিনি হাজার হাজার হাদীস মুখস্থ করেন। পরে সাহাবীদের মধ্যে তিনি সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে খ্যাত হন। তিনি মোট ৫৩৭৪টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া তিনি নবীজির সেবক হিসেবেও কাজ করেছেন। নবীজি যখন কোথাও যেতেন, তিনি সাথে থাকতেন। ভ্রমণ, যুদ্ধ, ইবাদত—প্রায় সর্বক্ষেত্রেই তার ছায়ার মতো ছিলেন আবু হুরাইরা (রাঃ)। তার দীনদারি, বিনয় ও অনুগত স্বভাব তাকে নবীজির প্রিয় করে তুলেছিল।
ধাপ – ৩: খিলাফতের যুগে ভূমিকা
নবীজি (সা.)-এর ওফাতের পর আবু হুরাইরা (রাঃ) প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর নিকট থেকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি মদিনায় থেকে সাহাবীদের মধ্যে হাদীস শিক্ষা দিতে থাকেন। তার কাছে বহু সাহাবী এবং তাবেঈন হাদীস শিখতে আসতেন।
হযরত উমর ফারুক (রাঃ) খিলাফতের সময় তাকে বহুবার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন। গভর্নর থাকাকালীন তিনি অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শাসন প্রদর্শন করেন। কোনো ধনসম্পদ বা বিলাসিতায় তিনি আসক্ত হননি। বরং দারিদ্র্যের মাঝেই জীবনযাপন করতেন।
উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতে এবং পরবর্তীতে আলী (রাঃ)-এর সময়েও তিনি হাদীস প্রচার ও শিক্ষা দানে ব্যস্ত ছিলেন। অনেক সাহাবী কোনো ঘটনা ভুলে গেলে তিনি সঠিক তথ্য মনে করিয়ে দিতেন। তার কাছে ইলমের ভাণ্ডার ছিল বিশাল।
তার জীবনে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল ইবাদতের প্রতি গভীর মনোযোগ। দিনে রোজা রাখতেন, রাতে ইবাদতে ব্যয় করতেন। তিনি বলতেন আমার পরিবার তিন ভাগে বিভক্ত; এক ভাগ রাতে নামাজ পড়ে, আরেক ভাগ দিনে রোজা রাখে, আরেক ভাগ আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকে।
ধাপ – ৪: মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর জীবন ছিল জ্ঞান, ইবাদত ও সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত। জীবনের শেষ দিকে তিনি মদিনায় বসবাস করছিলেন। অসুস্থ হলে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, যেন তিনি নবীজির সান্নিধ্যে জান্নাতে স্থান পান।
হিজরি ৫৭ বা ৫৯ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন (কিছু বর্ণনায় হিজরি ৫৭, কিছুতে ৫৯ বলা হয়েছে)। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৭৮ বছর। জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুর পর ইসলামের জ্ঞানভাণ্ডারে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তবে তিনি যে বিপুল পরিমাণ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহকে আলো দেবে। ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিযীসহ সকল হাদীস সংকলনে তার বর্ণিত হাদীস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর জীবনী আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও কষ্টের মাঝেও ইলমের পথে অবিচল ছিলেন। তার কাছে দুনিয়ার লোভ কিছুই ছিল না, বরং তিনি চেয়েছিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নবীজির (সা.) সঙ্গ।
আজ আমরা তার জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারি
*ইলম ও জ্ঞান অর্জন সর্বোচ্চ মর্যাদা।
*দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়, যদি উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়।
*নবীজির (সা.) সুন্নাহ প্রচারে তার অবদান অতুলনীয়।
তার নাম চিরকাল মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/